অটিজম একটি মানসিক রোগ। অটিজম মানে পাগল হয়ে যাওয়া।
না, অটিজম কোনো পাগলামি নয়। অটিজম হলো মস্তিষ্কের একটি সমস্যা, যেখানে শিশু সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন হলেও
তাদের সামাজিক ভাব বিনিময় ও সম্পর্ক স্থাপন ঠিকমতো হয় না। তাই তারা সমাজের বা অন্য মানুষের সাথে ঠিকভাবে
মিশতে পারে না, চোখে চোখ রেখে কথা বলে না, এবং কিছু ক্ষেত্রে শিশুরা একই কাজ বা বিষয় বার বার করার
প্রবণতা দেখায়। অনেক সময় তারা অতিচঞ্চলও হতে পারে।
রটনা:
অটিজম একটি অপরিচিত রোগ, এটি খুব কম মানুষের হয়।
বাস্তবতা:
প্রতি ৬৮ জন শিশুর মধ্যে ১ জন অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে (ASD) আক্রান্ত হয়। এটি একটি খুবই প্রচলিত
স্নায়ুবিকাশজনিত অবস্থা।
রটনা:
"আমার বাচ্চা একটু অন্যরকম, ও সবার সঙ্গে মিশতে চায় না, নিজের মতোই থাকে।"
বাস্তবতা:
এটি অটিজমের লক্ষণ হতে পারে। শিশুরা বড়দের মতো চিন্তাভাবনা করে না, তাই তারা সবার সঙ্গে সহজেই
মিশবে—এটি ধরা ঠিক নয়।
যদি আপনার শিশু—
- মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে না চায়,
- চোখে চোখ রেখে কথা না বলে,
- আগে কথা বলতে পারতো কিন্তু এখন পারে না,
- কথা বলার ক্ষমতা হারায়,
- অকারণে একভাবে চিৎকার বা কান্নাকাটি করে,
- একই কাজ বারবার করে (যেমন বারবার হাততালি দেওয়া, একই
খেলনা নিয়ে খেলা, ঘুরতে থাকা),
তবে এগুলো অটিজমের লক্ষণ হতে পারে।
"আমার বাচ্চা একটু অন্যরকম" ভেবে বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন না।
শিশুর সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
অটিজম: রটনা ও বাস্তবতা
- রটনা: অটিজম শুধু ছেলেদের রোগ, মেয়েদের হয়
না।
- বাস্তবতা: যদিও ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে অটিজমের হার চারগুণ বেশি, তবে মেয়েরাও
অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে।
- রটনা: এটি শুধু জিনগত সমস্যা।
- বাস্তবতা: মাত্র ২৫% ক্ষেত্রে অটিজমের নির্দিষ্ট জিনগত কারণ পাওয়া যায়, তবে বেশিরভাগ
ক্ষেত্রে একক কোনো জিন দায়ী নয়।
- রটনা: পরিবারের একটি শিশুর অটিজম থাকলে অন্য
সন্তানদেরও হতে পারে।
- বাস্তবতা: হ্যাঁ, পারে। যদি পরিবারের একজন শিশু অটিজমে আক্রান্ত হয়, তবে অন্য সন্তানের
অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা ১০-২০% বেড়ে যায়।
- রটনা: অটিজমের কোনো কারণ নেই, এটি একটি অজানা
রোগ।
- বাস্তবতা: যদিও এখনো অনেক কিছু আবিষ্কার করা বাকি, তবে জানা গেছে যে অটিজমের পেছনে
জিনগত, পরিবেশগত, মস্তিষ্কের সংযোগের সমস্যা, স্নায়ুতন্ত্রের নেটওয়ার্কের ব্যাধি এবং কিছু
রাসায়নিক ভারসাম্যের অভাব ভূমিকা রাখে।
- রটনা: বাবা-মায়ের কারণে শিশু অটিজমে আক্রান্ত
হয়।
- বাস্তবতা: এটি পুরোপুরি সত্য নয়, তবে কিছু বিষয় বাবা-মায়ের কারণে ঝুঁকি বাড়াতে পারে—
- 1. ৩০ বছরের পর গর্ভধারণ করা।
- 2. গর্ভাবস্থায় কিছু ওষুধ গ্রহণ করা (যেমন, ডিপ্রেশনের ওষুধ)।
- 3. মায়ের ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
- রটনা: কম বয়সে জন্ম নেওয়া শিশুদের অটিজমের ঝুঁকি
বেশি।
- বাস্তবতা: হ্যাঁ, কম ওজন বা প্রিম্যাচিউর শিশুদের মধ্যে অটিজমের হার বেশি দেখা যায়।
- রটনা: টিকা দেওয়ার পর আমার শিশুর অটিজম শুরু
হয়েছে।
- বাস্তবতা: এটি ভুল ধারণা। এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণায় প্রমাণ মেলেনি যে টিকা অটিজমের কারণ
হতে পারে। শিশুদের টিকা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- রটনা: লকডাউনের সময় শিশু বেশি মোবাইল-টিভি
দেখেছে, তাই অটিজম হয়েছে।
- বাস্তবতা: গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম (মোবাইল, টিভি, গেমিং) মস্তিষ্কের
রাসায়নিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে এবং অটিজমের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যদি শিশু খাবার না খেতে
চায়, কান্না করলে মোবাইল দিলেই শান্ত হয়ে যায়—এটি ভবিষ্যতে গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে। সতর্ক
থাকুন!
- রটনা: অটিজমের বাচ্চাদের বুদ্ধি কম হয়।
- বাস্তবতা: না, যদিও ৩৩-৪৫% বাচ্চার বুদ্ধিগত সমস্যা (ইন্টেলেকচুয়াল ডিসঅর্ডার) থাকতে
পারে, তবে বেশিরভাগের বুদ্ধিমত্তা ভালো হয়, কিছু ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত মেধাবীও হয়।
- রটনা: অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চাদের শুধু
সামাজিকতার সমস্যা হয়, অন্য কোনো সমস্যা হয় না!
- বাস্তবতা: না, ৩০% ক্ষেত্রে খিচুনি (এপিলেপসি), ৫০% ক্ষেত্রে অতিচঞ্চলতা (ADHD) এবং
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিষণ্নতা, ভয়, আচরণগত সমস্যা দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা
এবং বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও থাকতে পারে।
অনেক বাচ্চার ঘুমের সমস্যা (রাতে না ঘুমানো), খাবার গিলতে অসুবিধা, কোষ্ঠকাঠিন্য, নির্দিষ্ট
জামাকাপড় পরার অস্বস্তি এবং দৈনন্দিন কাজ করতে অসুবিধা হতে পারে।
- রটনা: অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চাদের আয়ু অন্যান্য
বাচ্চার তুলনায় কম!
- বাস্তবতা: কিছুটা সত্যি, সাধারণের তুলনায় অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চাদের মৃত্যুহার সামান্য
বেশি। কারণ হিসেবে দেখা গেছে—
- 1. দুর্ঘটনা (যেমন: ডুবে যাওয়া, শ্বাসরোধ)
- 2. সহ-বিদ্যমান স্নায়বিক বা মানসিক সমস্যা (যেমন: মৃগী, বুদ্ধিগত প্রতিবন্ধকতা)
- 3. আত্মহত্যার চিন্তা ও প্রচেষ্টা বেশি দেখা যায়, যদিও কারণ এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার
নয়।
- রটনা: নিরাশায় জড়িয়ে পড়েন বাবা-মায়েরা। এই
রোগের কোনো সমাধান নেই!
- বাস্তবতা: ভুল। দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং সময়মতো বিহেভিয়ারাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি,
অকুপেশনাল থেরাপি ইত্যাদি করালে অটিজম আক্রান্ত শিশুর উন্নতি সম্ভব। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান, প্রতি সপ্তাহে ২৫ ঘণ্টা বা তার বেশি প্রশিক্ষণ নেওয়া ইত্যাদি
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
- রটনা: অনেক ওষুধ! অনেক খরচ! লাভ কী হয়?
- বাস্তবতা: লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়, যেমন—
- উদ্বেগ, অতিচঞ্চলতা, ঘুমের সমস্যা ও বিষণ্নতা নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যবহার
করা যেতে পারে।
- এল-কারনোসিন (L-carnosine) গ্রহণ করলে স্নায়বিক কার্যকারিতা উন্নত হতে পারে।
- রটনা: বিকল্প ওষুধ ও থেরাপি খুব উপকারী, অনেকেই
সুস্থ হয়েছে!
- বাস্তবতা: কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে, কিন্তু সবগুলোর নিরাপত্তা ও
কার্যকারিতা নিশ্চিত নয়।
- রটনা: সব হারবাল ওষুধ ও অ্যালটানেটিভ থেরাপি কাজ
করে!
- বাস্তবতা: কিছু পদ্ধতিতে উপকারের প্রমাণ নেই, যেমন—সিক্রেটিন, ফ্যাসিলিটেটেড কমিউনিকেশন।
- রটনা: গ্লুটেন-মুক্ত বা ক্যাসিন-মুক্ত ডায়েট
নিলেই ভালো হয়ে যাবে!
- বাস্তবতা: এটি কিছু ক্ষেত্রে উপকারী হলেও সবার জন্য কার্যকর নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ
ছাড়া ডায়েট পরিবর্তন করা উচিত নয়।
- রটনা: কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ ও থেরাপি নিশ্চিতভাবে
কাজে দেয়!
- বাস্তবতা: কিছু থেরাপি ও ভিটামিন সহায়ক হতে পারে, যেমন—
- মিউজিক থেরাপি, অক্সিটোসিন, যোগব্যায়াম, সালফোরাফেন, ম্যাসাজ, মেলাটোনিন।
- ভিটামিন C, B12, ফলিক অ্যাসিড।
- রটনা: স্টেম সেল থেরাপি, প্রোবায়োটিকস,
আকুপাংচার ১০০% কার্যকর!
- বাস্তবতা: এগুলোর কার্যকারিতা ও ঝুঁকি সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য নেই। তাই স্টেম সেল থেরাপি,
ভেগাস নার্ভ স্টিমুলেশন, অডিটরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি, ক্যানাবিনয়েডস, প্রোবায়োটিকস, আকুপাংচার,
কায়রোপ্র্যাকটিক কেয়ার নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
- রটনা: বেশি মিষ্টি খেলে অটিজমের সমস্যা
বাড়ে!
- বাস্তবতা: কিছুটা সত্য। গবেষণায় দেখা গেছে, অটিজমযুক্ত শিশুদের মধ্যে বেশি পরিমাণে চিনি
মেশানো পানীয় (SSB) গ্রহণের ফলে আবেগজনিত সমস্যা বাড়তে পারে। অন্যদিকে, দুধ পান করার পরিমাণ
বাড়ালে সামাজিক আচরণ উন্নত হতে পারে। তাই চিনি মেশানো পানীয় কমিয়ে দুধের পরিমাণ বাড়ানো
উচিত।
অটিজমের চিকিৎসার জন্য কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
চাইল্ড বা পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট এবং চাইল্ড সাইকিয়াট্রিস্টের
পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডাঃ এম. এম. সামিম – ব্যাঙ্গালোরের নিমহান্স হাসপাতাল থেকে অল ইন্ডিয়া
ফার্স্ট হয়ে গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ, যিনি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের নিউরোলজিস্ট হিসাবে
প্রশিক্ষিত।
আপনার শিশুর অটিজমের লক্ষণ থাকলে সঠিক চিকিৎসার জন্য চেন্নাই বা বেঙ্গালুরু না ছুটে, নিজ রাজ্যেই
বিশ্বমানের চিকিৎসার জন্য ডা. এম এম সামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করুন – ৯০৩৮৯০২৬৭৭।